পৃথিবীকে বদলে দেয়া নারীরা!

মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়, জীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে জ্ঞান, পরিশ্রম ও সাধনাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক সভ্যতার বিশাল ইমারত গড়ে তুলছে। পিছিয়ে নেই নারীরাও। বিভিন্ন প্রযুক্তি আবিষ্কারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও অবদান রয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, পৃথিবীকে বদলে দেয়া সেসব নারীদের।
রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন
ছবিঃ রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন- ডিএনএ এর জগতে প্রবেশ যার হাত ধরে
জিনতত্ত্ব বা জেনেটিক্স এর জগতে এক বিখ্যাত নাম রোজালিন্ড এলজি ফ্রাঙ্কলিন । ডিএনএ সম্পর্কে যখন কোনো ধারণা ছিল না তখন তিনি রঞ্জন-রশ্নি অপবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ডিএনএ এর হেলিকাল কাঠামো এর স্পষ্ট ছবি নিয়েছিলেন, ডিএনএ এর ঘনত্ব বের করেন, ডিএনএ তে উপস্থিত ফসফেট অণুর অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হন। কিন্তু তার অনুমতি ছাড়াই ওয়াটসন এবং ক্রিক এই তথ্যগুলো তাদের গবেষণার অংশ হিসেবে প্রকাশ করেন। ডিএনএ এর গঠন নিয়ে কাজ করা ছাড়াও তিনি ভাইরাসবিজ্ঞানে, গ্রাফাইটের গঠন-কাঠামো পর্যপবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। (তথ্য সূত্র)
মেরি কুরি
ছবিঃ মেরি কুরিঃ নোবেল পুরস্কার জয়ী প্রথম নারী
মাদার অফ মডার্ন ফিজিক্স নামে পরিচিত মেরি কুরি ছিলেন একজন পদার্থবিদ এবং রসায়নবিদ। তিনি তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে এই তেজস্ক্রিয় রশ্নি ব্যবহার করে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় ক্যান্সার চিকিৎসায়। (তথ্য সূত্র )
হেনরিয়েটা ল্যাকস
ছবিঃ হ্যানরিয়েটা ল্যাকস (অমর হেলা)
হেনরিয়েটা ল্যাকস জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জন হপকিন্স হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় জন হপকিন্স হাসপাতাল থেকে কিছু ক্যান্সার কোষ ল্যাবরেটরিতে গবেষণার জন্য পাঠানো হতো। কেননা, ক্যান্সার কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়। ল্যাবরেটরিতে এ কোষগুলো উপযুক্ত পরিবেশ পেলেও এরকম বিভাজিত হয় কিনা আর হলেও কতক্ষণ হতে পারে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবশেষে হেনরিয়েটা ল্যাকস এর ক্যান্সার কোষ আশার আলো দেখায়। অর্থাৎ এই কোষগুলো দেহের বাইরেও বিভাজিত হতে শুরু করে এবং এজন্য বলা হয়ে থাকে অমৃত হেলা কোষ। মজার ব্যাপার হলো, তার অনুমতি ছাড়াই কোষগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। এমনকি তিনি জীবিত অবস্থায় এ ব্যাপারে জানতে পারেন নি। অমর এই কোষগুলো বর্তমানে ব্যবহৃত হয় হিমোফিলিয়া, পারকিনসন রোগ, হার্পিস, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় যা মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ। (তথ্য সূত্র )
জেনিফার ডাউডনা এবং এমানুয়েল শার্পেঞ্চার
ছবিঃ জেনিফার ডাউডনা, এমানুয়েল শার্পেঞ্চার- (ক্রিসপার)ক্যাস-৯ উদ্ভাবনকারী
সম্প্রতি বহুল আলোচিত ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তির উদ্ভাবক মার্কিন বিজ্ঞানী জেনিফার ডাউডনা এবং ফরাসী বিজ্ঞানী এমানুয়েল শার্পেঞ্চার। ক্রিসপার ক্যাস-৯ এমন এক প্রযুক্তি যা ব্যাবহার করে ত্রুটিপূর্ণ জিন কাটছাঁট করে কাঙ্ক্ষিত জিন প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। জিনগত বিভিন্ন রোগ যেমন, ডাউন সিন্ড্রোম, অটিজম, এনিমিয়া প্রভৃতি এমনকি ক্যান্সার, এইডসের মতো ভয়াবহ রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞগণ। চমৎকার এই প্রযুক্তির উদ্ভাবনের কারণে ২০২০ সালে নোবেল জয়ের কৃতিত্ব ছিল এই দুই নারীর। (তথ্য সূত্রঃ )
এদের ছাড়াও ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন ডরথি হজকিন (ইনসুলিন এর গঠন বের করেন), ইঞ্জ লেহম্যান (পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো উদ্ভাবন করেন), ক্লিনটন (জাম্পিং জিন আবিষ্কারে জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন), এলিজাবেথ এন্ডারসন (প্রথম ইংরেজ নারী ডাক্তার), মেরি এনিং (ডাইনাসর এর জীবাশ্ম সংগ্রহ করেন) সহ আরো অনেকে। প্রযুক্তির আবিষ্কার ও বিকাশে নারীরাও যেন অবদান রাখতে পারে সেই পথ উন্মুক্ত করে দিতে হবে পরিবারকে, দেশকে এবং জাতিকে। (তথ্য সূত্রঃ )
সাদিয়া জামান
হেড অব ডেইলি সায়েন্স প্রজেক্ট
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১১০০