
দু’টো তিমি একটি সাদা হাঙরকে তাড়া করে যাচ্ছে। শিকার আর শিকারীর এই অসম লড়াইয়ে অবশেষে একটি তিমির দাতের মাঝে দেখা যায় মৃত শার্কটিকে। পুরো দৃশ্যটি সাইন্স ফিকশনের মতো লাগলেও আগা গোড়া বাস্তব।
তিমি বলতে যে প্রাণীর কথা প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সে কল্পনার চাইতেও বিশাল। বিরাট এ প্রাণী বৃহৎ পেট ভরে ফাইটোপ্লাঙ্কটন খেয়ে । এছাড়াও কখনো কখনো ক্রিল ( ছোট চিঙড়ী) বা ক্রাস্টাশিয়ান পর্বের ছোটখাটো প্রাণী খেতে দেখে যায়।
এ মেনু নিয়ে সে কিভাবে কিলার হোয়েল নাম পেয়ে গেলো তা আসলেই রহস্যময়।
শিকারী তিমির উৎপত্তি হয় সি ডলফিনের একটি প্রজাতি থেকে । সাদা আর তার বিপরীত কালোর অনন্য মিশ্রণের এই অসাধারণ প্রাণী যেন একাধারে ” বিউটি এন্ড দ্যা বিস্ট”।
কেন শিকারী নাম? সে কি মানুষকেই আক্রমণ করে সেই হাঙরের মতো যে এক ফোটা রক্তের অনুভব অনেক দূরে থেকেই আচ করতে পারে।
মজার বিষয় কি জানেন! কিলার হোয়েল কখনো মানুষ আক্রমণ করেনি। তবে বিভিন্ন একুরিয়ামে ্তাদের দেখভালের লোকদের ছোটখাটো আঘাতের কথা শোনা যায়।
শিকারী তিমি বা ওরকা এর প্রধান খাদ্য সি লায়ন। এদের মোটামুটি সব মহাসাগরেই পাওয়া যায়, শুধুমাত্র ব্যাল্টিক আর ব্লাক সী বাদে।
স্থান বা খাবার প্রাপ্যতার ওপরে ভিত্তি করে তাদের খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করতে দেখা যায়৷ এই তালিকায় মাছ থেকে হাঙর পর্যন্ত রয়েছে।
বিভিন্ন উপজাতি যারা মিথোলজিতে অনেক বেশি বিশ্বাসী, তাদের কাছে শিকারী তিমি “সাগরের রাজা” হিসেবে আখ্যায়িত।
জল কাপানো এই দানব কিন্তু রেহাই পায় নি। মানুষের গণহারে পরিবেশ দুষণ, সাগরে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, ওদের শিকারকেই মানুষের শিকার করে ফেলা, আরও কতকিছু। ২০২০ সালের আগে সর্বশেষ তিমি মারা গিয়েছিলো ২০০১ সালে। ২০২০ সালে মারা যাওয়া ওরকা এর ময়নাতদন্ত করে দেখা যায় পেটের মাঝে ভর্তি প্লাস্টিক!!
সম্প্রতি একটা গবেষণাতে দেখা যায়, সাগরে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ সাগরে প্রতি ৩ মিলিয়ন মাছের বিপরীতে থাকবে ১ মিলিয়ন প্লাস্টিক। ২০৫০ সালে প্লাস্টিকের পরিমাণ, মাছের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাবে ( ওজনের ভিত্তিতে)।
দ্যা ডুডো এর ভিত্তিতে, তিমিটির এনাটমির পরে তার পাকস্থলীতে কেবল প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। একটি বিষয় পরিষ্কার যে, কোথাও কোন খাদ্য না পেয়ে নিরীহ এই প্রাণী শেষমেশ প্লাস্টিক খেয়ে মৃত্যু বরণ করেছে।
শিকারী প্রাণীগুলো আজকে আমাদের সভ্য মানবসমাজের মানুষের কাছেও নিরীহ। আমাদের বিবেকবোধহীন কাজকর্মের জন্য আজকে ওরা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরা সচেতন হই, সাগর বাঁচাই এবং ফিরিয়ে দেই ওদের সুন্দর, অনাবিল পরিবেশ।
অলিউল ইসলাম তকি
মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ
সেশন – ২০১৭/১৮
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্রঃ