আমরা সব মানুষই একটি মাত্র কোষ থেকে সৃষ্টি,  আর আর এই কোষের নাম হলো জাইগোট বা ভ্রুনকোষ বা আদিকোষ ভ্রুনকোষ।  আর এই ভ্রুনকোষের পুনঃপুন বিভাজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোষের সৃষ্টি হয় এবং আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠন হয়ে থাকে,  ঠিক একই ভাবে স্টেম সেল বা সস্য কোষও এক ধরনের আদি কোষ যা বিভিন্ন ধরনের কোষে রুপান্তরিত হতে পারে ( যেমনঃ পেশী কোষ থেকে মস্তিষ্ক কোষে রুপান্তর হওয়া)  প্রয়োজন অনুযায়ী,  অর্থাৎ এই স্টেম সেল এর বিভিন্ন ধরনের কোষ উৎপাদন করার সক্ষমতা র‍য়েছে।  এমনকি এই কোষ ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুকেও মেরামত করতে পারে। গবেষকরা  ধারণা করছেন যে এই স্টেম সেল ব্যবহার করে মারাত্মক রোগ থেকেও বাঁচার সম্ভাবনা  রয়েছে।  

আমাদের দেহে সাধারণত ২ ধরনের স্টেম কোষ র‍য়েছে, যেমনঃ 

১. ভ্রুন থাকা অবস্থায় স্টেম কোষ (Embryonic):

এই কোষ সাধারণত ৩-৫ দিন বয়সী ভ্রুনের দেহে দেখা যায়, এই কোষ কে Pluripotent cell ও বলা হয়। 

২.প্রাপ্ত বয়স্কদের স্টেম কোষ (Adult stem cell)ঃ

এই ধরনের কোষকে বিভ্রান্তিকর কোষও বলা হয়ে থাকে কারণ এটি প্রাপ্ত বয়স্ক, শিশু, এমনকি ভ্রুনের দেহেও পাওয়া যায়, আর এই কোষই প্রানীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠন করে থাকে। 

 

স্টেম সেল -এর ব্যবহারঃ

১। ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ বা টিস্যুকে পুনরায় সচল করে তোলার জন্য ল্যাবরেটরিতে/ গবেষণাগারে নতুন কোষ উৎপাদন করা স্টেম সেল ব্যবহার এর মাধ্যমে। 

২।যেসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল নয় বা সঠিক ভাবে ককজ করতে অক্ষম,  তাদেরকে আবার সচল করা।

৩।কোষের জিনগত সমস্যা গুলো সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত জানার জন্য গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত হওয়া। 

৪। এই স্টেম কোষ ব্যবহার এর মাধ্যমে জানা যাবে যে, কেন কিছু সংখ্যক কোষ ক্যন্সার সৃষ্টি করে থাকে। 

৫। নতুন ঔষধ এর পরীক্ষা এবং তাদের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে সহায়তা করা।  

স্টেম সেল ব্যবহারে সম্ভাব্য ঝুঁকিঃ

প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন ভাল দিক র‍য়েছে তেমনি খারাপ দিক ও রয়েছে, আর স্টেম সেল ব্যবহার এর ক্ষেত্রে ও রয়েছে কিছু ঝুঁকি,  যেমনঃ FDA (Food and Drug Administration ) এর তথ্য অনুযায়ী,  একজন রোগীর চোখের চিকিৎসার জন্য চোখে স্টেম সেল ইঞ্জেকশন দেয়ার কারণে তিনি চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। আবার অন্য একজন রোগীর মেরুদণ্ডে স্টেম সেল ইঞ্জেক্ট করার ফলে তার মেরুদণ্ডে থাকা টিউমার আরও বেড়ে গিয়েছিল,  এছাড়াও, 

১. স্টেম সেল গুলোকে যে স্থানে যে কাজে প্রয়োগ করা হয়, অনেকক্ষেত্রেই কোষ গুলো তাদের অবস্থান   

পরিবর্তন করে অন্য কোষে রুপান্তরিত করতে পারে ফলে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। 

২. আশানুরূপভাবে কাজ করার অক্ষমতা। 

৩. পরিশেষে টিউমার ও ক্যন্সার সৃষ্টি। 

 

– স্টেম কোষ এর এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা এর ক্ষতিকর দিকগুলোকে প্রশমিত করে মানবিক কল্যানে ব্যবহারের জন্য দিনরাত গবেষণা করে যাচ্ছে। তাই পরিশেষে বলাই যায় যে স্টেম সেল এর সঠিক ব্যবহার ভবিষ্যতে আমাদের জন্য আশার আলো হতে পারে।

 

মাইমুন নাহার 

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলোজি ডিপার্টমেন্ট।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্রঃ

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6390367/

https://www.healthline.com/health/stem-cell-research

https://www.mayoclinic.org/tests-procedures/bone-marrow-transplant/in-depth/stem-cells/art-20048117

https://www.fda.gov/consumers/consumer-updates/fda-warns-about-stem-cell-therapies

Previous articleস্তন ক্যান্সারঃ কী? কেন হয়? কারা ঝুঁকিতে বেশি? – পর্বঃ ১ 
Next articleএক নজরে ক্যান্সারের চতুর্থ ধাপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here