
পৃথিবীর একভাগ স্থল, তিন ভাগ জল! আর এই জলের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য সামুদ্রিক প্রাণীর বসবাস, যার মধ্যে একটি হচ্ছে তারা মাছ।
ইংরেজিতে “Star Fish” বা “Sea Star” নামে পরিচিত। নামে তারা মাছ হলেও এরা কিন্তু আসলে মাছ নয়। মাছ মেরুদণ্ডী প্রাণী; কিন্তু তারা মাছ এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা ইকাইনোডার্মাটা (Echinodermata) পর্বের Asteroidea শ্রেণির সদস্য।
একটি পূর্ণাঙ্গ তারা মাছ পঞ্চঅরীয় প্রতিসম এবং কাঁটাযুক্ত দেহবিশিষ্ট। সাধারণত তারা মাছের পাঁচটা বাহু থাকে, যার কারণে আসলে এদের সমুদ্র তারা বা তারামাছ বলা হয়। তবে কিছু কিছু প্রজাতির বাহুর সংখ্যা ৬ বা তার বেশি, এমনকি ৫০টা পর্যন্ত হতে পারে। যেমন, Labidiaster annulatus নামক প্রজাতির তারা মাছের বাহুর সংখ্যা ৫০টি।
তারা মাছ দেখতে অন্য সব সামুদ্রিক প্রাণীর থেকে বেশ আলাদা এবং আকর্ষণীয়। সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ২,০০০ প্রজাতির তারা মাছ রয়েছে। যাদের মধ্যে কিছু প্রজাতি বেশ উদ্ভট আবার কিছু কিছু প্রজাতি অদ্ভুত সুন্দর। এমনই আকর্ষণীয় ৫টি তারা মাছের তথ্য তুলে ধরা হলো –
১. সানফ্লাওয়ার স্টার ফিশ (Sunflower Sea Star)
এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকৃতির তারা মাছ, বৈজ্ঞানিক নাম Pycnopodia helianthoides. এদের বাহু প্রসারিত করলে এরা প্রায় ৩ ফুট পর্যন্ত জায়গা নিয়ে থাকে। জীবনদশার শুরুতে ৫টি বাহু থাকলেও, বড় হওয়ার সাথে সাথে এদের বাহুর সংখ্যা ৪০টি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নর্থ আমেরিকার অ্যালাস্কা বা ক্যালিফর্নিয়া উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে এদের পাওয়া যায়। মূলত যে অঞ্চলে পানি বেশি সেখানেই এদের বেশি খুঁজে পাওয়া যায়। এ ধরনের তারা মাছেরা নিজের গায়ের রঙ ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করতে পারে। বেগুনি থেকে বাদামী কিংবা কমলা বা হলুদ রঙের নরম ত্বক এদের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
২. পিংক স্টার ফিশ (Pink Starfish)
গোলাপি রঙের এই প্রজাতির তারা মাছ দেখতে অনেকটা চুইংগামের মতো, এদের এই গায়ের রঙের কারণেই এরা বেশি পরিচিত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Pisaster brevispinus. সুন্দর প্রকৃতির এই তারা মাছ ওজনে প্রায় ১ কেজির কাছাকাছি এবং আকৃতিতে প্রায় ২ফিটের মতো হয়ে থাকে। এদের সাধারণত উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
৩. নেকলেস স্টার ফিশ (Necklace Starfish)
এ প্রজাতির তারা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Fromia monilis। এরা গহনার মতো দেখতে হওয়ায় নেকলেস স্টারফিস নামেই বেশি পরিচিত। এদের অনেকে রেড টাইল স্টার ফিশও বলে থাকে। লম্বায় ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত এই তারামাছের বর্ণিল রঙের কারণে অনেকে অ্যাকুরিয়ামে রাখতে পছন্দ করে। এদের সাধারণত ভারত মহাসাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহা-সাগরীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
৪. চকোলেট স্টার ফিশ (Chocolate Starfish)
Protoreaster nodosus বৈজ্ঞানিক নাম বিশিষ্ট এই তারা মাছের ত্বক কিছুটা চকোলেট চিপসের মতোই। ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগর থেকে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। এই চকোলেট চিপ স্টারফিশগুলি লম্বায় প্রায় ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও সাধারণত এদের অগভীর জলে দেখা যায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানির উপরিতল থেকে ৭৫ ফুট পর্যন্ত গভীরতায়ও এদের পাওয়া যায়।
৫. লেদার স্টার ফিশ (Leather Sea Star)
সামুদ্রিক প্রাণিদের মধ্যে সৌন্দর্যের দিক থেকে লেদার স্টার ফিশ রয়েছে শীর্ষে। চামড়া/লেদারের মতো মসৃণ চকচকে ত্বক থাকায় এ প্রজাতির তারা মাছের এমন নামকরণ।
এদের বৈজ্ঞানিক নাম Dermasterias imbricata. এই লেদার স্টার ফিশের দেখা মিলবে অ্যালাস্কা, মেক্সিকো এবং নর্থ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে; সমুদ্রের উপরিতল থেকে ৩০০ ফুট নিচে।
রাসনুন মেহনাজ
সমুদ্র আইন বিভাগ, ১ম বর্ষ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র:
Spiny pink star • Pisaster brevispinus
Fromia monilis – The Necklace Sea Star