স্পিরুলিনা কেন সুপারফুড?

“স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল ” অথবা “স্বাস্থ্যই সম্পদ”, এই উক্তিগুলোর সাথে আমরা প্রত্যেকে কম বেশি পরিচিত। আর সুস্বাস্থ্যের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে একটি বিষয়, “পুষ্টিকর খাদ্য “। যখন কোনো খাদ্যে পুষ্টিগুন ভরপুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে তখন তাকে আমরা ” সুপারফুড” বলে আখ্যায়িত করে থাকি। তেমনই এক সুপারফুড হচ্ছে স্পিরুলিনা।
স্পিরুলিনা হলো এক প্রকার বহুকোষী নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Arthrospira platensis । এদের মূলত উষ্ণ, ক্ষারীয় পানিতে পাওয়া যায়। এদের বাহ্যিক গঠনাকৃতি সর্পিলাকার হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয় স্পিরুলিনা। বর্তমান বিশ্বে এটি একটি অন্যতম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য পরিপূরক যা কিনা খুব স্বল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কোটি কোটি মানুষের কাছে।
স্পিরুলিনা এর জৈব রাসায়নিক উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রোটিন। এর শুষ্ক ওজনের শতকরা ৫৫%-৭০% ভাগ প্রোটিন, যা কিনা অন্যান্য উদ্ভিদজাত খাদ্যদ্রব্যের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও এতে রয়েছে অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন -এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন -কে, ভিটামিন -বি(১,২,৩,৬,১২), ফলিক এসিড, ইনোসিটল, বায়োটিন ইত্যাদি। স্পিরুলিনায় রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান, যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, আয়োডিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
স্পিরুলিনা সেবনের মাধ্যমে যেসব স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো :
** এরা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কার্যক্ষমতাকে বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম।
** এদের জৈব রাসায়নিক উপাদানে প্রোটিনের পরিমাণ অন্যান্য উদ্ভিদজাত খাদ্যদ্রব্যের তুলনায় অনেক বেশি ।
**ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে এরা অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনাকে আরও মজবুত করে।
** এরা বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ। যার ফলে দেহে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের ঘাটতি অনায়াসে দূরীভূত করা সম্ভব। যেমন- এতে রয়েছে লৌহ যা দেহের রক্তাল্পতা দূরীকরণে সক্ষম।
**দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
**দেহে থেকে বিষাক্ত পদার্থের অপসারণে এটি চমকপ্রদ ভূমিকা পালন করে থাকে।
**প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকার ফলে এটি খুব দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে।
**ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান থাকার ফলে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে স্পিরুলিনা একটি পরিচিত সুপারফুড। এটি ট্যাবলেট এবং গুঁড়া উভয় আকারে সেবন করা যায়। বিশ্বের অন্তত ২২ টি দেশে এটি বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। স্পিরুলিনা এতটাই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য পরিপূরক যে নাসা(NASA) ১৯৮৮ সালে এটিকে নভোচারীদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে স্পিরুলিনা চাষে প্রাথমিকভাবে সফলতা অর্জন করেছে।
অগ্নিলা সাইফুল
জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট
References: