
পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান এবং অমূল্য সম্পদ হলো মাটি। আমাদের চলা ফেরা থেকে খাওয়া দাওয়ায় নানানভাবে জড়িত এই মাটি। মানুষের মাঝে মৃত্তিকা সম্পদ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করে আসছে।
জীববৈচিত্র্যের মোট ২৫% এর সরাসরি আবাসস্থল হল মৃত্তিকা। জীব জগতের প্রায় ৯০% জীব ই জীবনচক্রের কোন না কোন অংশ মাটিতে অতিবাহিত করে।
আমরা অনেকেই হয়ত জানিনা যে ভূমির উপর প্রাকৃতিকভাবে ১ ইঞ্চি পরিমাণ মৃত্তিকা গঠিত হতে ৫০০-১০০০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অথচ নানা কারণে ভূমির উপরিভাগের মাটি নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশে মাটিতে থাকা অণুজীব হ্রাসের কারণের মধ্যে রয়েছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ন, কীটনাশক এর অপরিকল্পিত ব্যবহার, ব্যাপকভাবে বনভূমি ধ্বংস করা, পাহাড়ে জুম চাষ, ইটের ভাটা ইত্যাদি। চাষাবাদে সৃষ্টি হচ্ছে নানান সমস্যা, বাড়ছে খরা।
বর্তমানে মৃত্তিকার জন্য ভয়াবহ বা উদ্বেগজনক কারণ হলো ইট ভাটা। এতে বিপুল পরিমাণে ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। বর্তমানে সঠিক দিক-নির্দেশনা না থাকার কারণে কৃষি উপযোগী জমিতে হচ্ছে শিল্প কারখানা এমন কি এইসব জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে ইট ভাটা। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে যা মাটির ক্ষয়ের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও ঘটাচ্ছে।
FAO এর মতে মাটিতে থাকা অণুজীবের মাত্র ১% বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন; অধিকাংশই এখনো অজানা।
বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর ৩% করে বনভূমি বিনাশ হচ্ছে যা ব্যাপকভাবে ভূমি ক্ষয়ের কারণ এবং বাংলা পিডিয়ার তথ্য মতে এভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বছরে ১০২ টন/হেক্টর। এছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চল যেখানে জুম চাষ হয়ে থাকে সেখানেও মৃত্তিকা ক্ষয় এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশি (বছরে ৭-১২০ টন/হেক্টর)। বিগত এক দশকে একাধিক ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ্বাস এবং ফারাক্কা বাঁধের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে লবণাক্ততা ব্যাপকভাবে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
দেশের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় মৃত্তিকা সম্পদের সঠিক ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে আবাদি জমির পরিমাণ কমার সম্ভাবনা অনেক বেশি যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
আমাদের দেশে মৃত্তিকা বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান স্কুল কলেজ পর্যায়ে এখনো সেভাবে পাঠ্য নয়। কাজেই বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
‘কিপ সয়েল অ্যালাইভ, প্রটেক্ট সয়েল বায়োডাইভারসিটি– মাটি বাঁচিয়ে রাখুন, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন’ এই স্লোগান ই বাঁচাতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
আফিয়া ইমরাদ তাহাসিন
কো-অর্ডিনেটর অফ ডেইলি সায়েন্স প্রজেক্ট,
বায়ো ডেইলি।
তথ্যসূত্রঃ