বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতব্যাধি শরীরে কোন প্রভাব ফেলছে না তো??

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো বাত রোগ। অর্থাৎ রিউম্যাটোলজি। বাত জনিত রোগ হল কঙ্কালতন্ত্র ও যোজক কলার দীর্ঘ স্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ। যদি কোন কারণে তরুণাস্থির ক্ষয় হয় তবে তা অস্থি-সন্ধির সঞ্চালনে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। এই অস্থি-সন্ধি একটি বিশেষ ধরনের ঝিল্লী দ্বারা আবৃত থাকে। ভিতরের অংশটি ঝিল্লীর রস বা সাইনোভিয়াতে পরিপূর্ণ থাকে। এই রস তরুণাস্থি ও অস্থির পুষ্টি তৈরি করে। আর, মাংসপেশির সাথে অস্থিগুলোকে সংযুক্ত করে। এইভাবেই আমাদের হাতের এবং পায়ের শক্তি জোগায় এবং আমরা কাজ করতে পারি। কিন্তু এই তরুণাস্থির ক্ষয় হলে তাকে আমরা বাত রোগ বলে থাকি। বাত ( ইংরেজি Arthritis) গ্রীক Arthro অর্থাৎ সন্ধি আর Itis অর্থ প্রদাহ। এটি মূলত অস্থি-সন্ধির প্রদাহ যা এক বা একাধিক অস্থি সন্ধিকে আক্রান্ত করে। মূলত অস্থি-সন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হওয়ার ফলে এই রোগের উৎপত্তি হয়। বাত একটি মাত্র রোগ নয় বরং অনেকগুলো রোগের সমষ্টি। প্রায় ১০০ টি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে বাত রোগ তৈরি হয়। এই রোগে সাধারণত অস্থি-সন্ধি আক্রান্ত হলেও পর্যায়ক্রমে হাড়ের প্রদাহ, ক্ষয় রোধ, লিগামেন্টে ব্যাথা, মাংসপেশিতে ব্যাথা ইত্যাদি পর্যায়েও ছড়াতে পারে। সাধারণত মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায় তার থেকে বেশি পরিমাণে ইউরিক এসিড যখন যকৃত তৈরি করে তখনই তা রক্তের ইউরিক এসিড এর পরিমাণ বাড়ায়। খাবারের মাধ্যমেও অতিরিক্ত ইউরিক এসিড উৎপন্ন হওয়া সম্ভব। যেমন- লাল মাংস, রেড ওয়াইন, ক্রিম ইত্যাদি খাদ্য গ্রহণ করলে কিডনী যথেষ্ট পরিমাণে তা পরিশোধন করতে না পারলে বাত রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। নিয়মিত এলকোহল পান করলে তা দেহ থেকে ইউরিক এসিড বের করার পথে বাঁধা দেয়।শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি রোগীর ক্ষেত্রেই বাত রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে। বাত রোগ ৫০-৫৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মানুষের অক্ষমতার মূল কারণ।
বাত একটিমাত্র রোগ নয়। অনেকগুলো রোগের সমষ্টি হলো বাত রোগ। নিম্নলিখিত রোগগুলোর সমন্বয়ে বাত রোগ গঠিত হয়। যেমন-
- অষ্টিও আর্থ্রাইটিস / অস্থি সংযোগের গ্রন্থি প্রদাহ।
- সন্ধিবাত / ফোলানো বাত
- ঘাড়ের বাত
- স্কন্ধ বাত
- পার্শ্ব বাত
- গেটে বাত
- কোমর প্রদাহ
- মেরুদণ্ড প্রদাহ
- এলার্জি
- আমবাত
- বাতজ্বর ইত্যাদির সমন্বয়ে বাত রোগ তৈরি হয়।
বিভিন্ন কারণে মানুষ বাতরোগের সম্মুখীন হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো –
- পুষ্টির অভাব। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের অভাবে। বিশেষ করে ভিটামিন -ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে।
- বয়স বৃদ্ধির ফলে তরুণাস্থি ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং পুনরায় গঠনের ক্ষমতা থাকেনা। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাত রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও বাড়ে।
- পূর্বের কোন বড় ধরনের আঘাতের ফলেও বাত রোগ হতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজনের ফলে শরীরের জয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। যা হতে মোটা ব্যাক্তিরা সাধারণত বাত রোগে ভুগে।
বাত রোগের লক্ষণ-
- অস্থি-সন্ধি ফুলে যাওয়া
- পরিমিত ঘুম না হওয়া
- আড়ষ্টতা
- হাত ব্যবহারে অক্ষমতা
- গ্লানি বোধ
- হাঁটতে অক্ষমতা
- ওজন কমে যাওয়া
- পেশী ব্যাথা ও দুর্বলতা
- শরীরের যে কোন অংশে ফুলে উঠা
- বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা অনুভব।
চিকিৎসা –
বাত রোগ এর মূল চিকিৎসা হলো অস্থি-সন্ধিতে ইউরিক এসিড এর পরিমাণ কমিয়ে আনা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করা এবং আক্রান্ত স্থানে ইনজেকশন ব্যবহার করা। তবে, যেসব খাবার খেলে ইউরিক এসিড অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয় তা পরিহার করতে হবে। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে। বাত চিকিৎসা করানো না হলে অস্থি-সন্ধির যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে এমনকি চলন ক্ষমতাও হ্রাস করে।
আফিয়া ইমরাদ তাহাসিন
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি
ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং।
Reference –
1. Prediction of inactive disease and relapse in oligoarticular juvenile idiopathic arthritis
https://link.researcher-app.com/Lod4- via Researcher (@ResearcherApp)
2. Pain and Neuropathic Pain in Rheumatic Diseases https://link.researcher-app.com/1qJs- via Researcher (@ResearcherApp)
3. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Rheumatology
4. https://www.webmd.com/rheumatoid-arthritis/an-overview-of-rheumatic-diseases
Wonderful article. I found lots of information here…..very helpful
Thank you