
মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিটি মানুষের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনো কারণে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় আবেগ-অনুভূতি, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কল্যাণকর অবস্থা। আমাদের চিন্তা ভাবনা, অনুভূতি আচরণ ও কাজের ওপর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব রয়েছে।
বেশ কিছু ফ্যাক্টর আছে যেগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সেগুলোর মাঝে প্রথমে আসে বায়োলজিকাল ফ্যাক্টর, অর্থাৎ জিন বা মস্তিষ্কের গঠন এবং এর রসায়ন। তারপর অভিজ্ঞতা, সারাজীবনে আমরা নানা ধরণের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই যেগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণ স্বরুপ, ছোটবেলার কোনো ট্রমা বা এবিউজি বড় হাওয়ার পরও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। তৃতীয়ত, পারিবারিক ইতিহাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটাও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হওয়া খুবই সাধারণ এবং তার প্রতিকারও আছে। কিন্তু সমস্যা গুলোকে গুরুত্ব না দেয়া হলে সেগুলো ভয়ংকর রুপ নিতে পারে। ফলে সামাজিক ভাবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং এর সমস্যা সম্পর্কে আরোও সচেতন হতে হবে।
একজন মানুষ যখন কোনো মানসিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়, তখন তার স্বাভাবিক জীবন যাপন পদ্ধতি ব্যাহত হয়। কিছু আচরণ আছে যেগুলো লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে কেউ মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে কিনা। যেমনঃ
• খুব বেশি বা খুব কম খাওয়া বা কম ঘুমানো
• মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম না করা
• কাজে কোনো শক্তি না পাওয়া
• সবকিছু নিয়ে শৈথিল্য আসা, অর্থাৎ কোনো কিছুরই কোনো মানে নেই বা কিছুই ম্যাটার করে না এমন ভাবা।
• একেবারে নিরাশ হয়ে পড়া।
• অনেক বেশি মুড স্যুইং হওয়া
• নির্দিষ্ট কোনো চিন্তা বা স্মৃতি মাথার ভেতর ঘুরতে থাকা যা চেষ্টা করেও বের করা যায় না
• অনেক বেশি কনফিউজড, রাগান্বিত, ভুলে যাওয়া, ভয় পাওয়া বা উদ্বিগ্ন থাকা।
• নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা করা
• এমন কোনো ভয়েস শোনা যেটা নেই বা এমন কিছু বিশ্বাস করা যার কোন অস্তিত্ব নেই
• মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান করা
• স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ করতে না পারা। নিজেকে দুর্বল ভাবা।
কারো মাঝে এই লক্ষণ গুলো দেখা গেলে বুঝতে হবে সে কোনো মানসিক সমস্যার মাঝে আছে।
যে কাজ করলে আমরা মানসিকভাবে কিছুটা স্বাস্থ্যকে সুস্থ থাকতে পারি। তা হল-
• পরিমিত ও পুষ্টিকর খাাবর খাওয়া।
• যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করা।
• সবার সাথে কানেক্টেড থাকা। পরিবারের সাথে কথা বলা।
• অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করা।
• শারিরীক ভাবে সক্রিয় থাকা, কোনো না কোনো কাজ করা। শরীরচর্চা করা।
• নিজের দক্ষতার উন্নতি করার চেষ্টা করা।
• সর্বোপরি পজিটিভ থাকা এবং সমস্যা যদি বেশি মনে হয় তাহলে অবশ্যই কারো সাহায্য নিতে হবে।
পজিটিভ থাকার জন্য যে জিনিসগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে তা হলঃ
প্রথমত নিজের পটেনশিয়াল, অর্থাৎ সক্ষমতা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে ভালভাবে উপলব্ধি করা। জীবনে চাপ আসবে, সেটার সাথে সবচেয়ে ভালভাবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে কোনো বেনিফিট থাকে, অর্থাৎ প্রোডাক্টিভিলি কাজ করা এবং সর্বোপরি নিজের সমাজ, দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা। এটা নিজের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
মানসিক সমস্যা সবসময়ই ছিল এবং থাকবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে করোনা মহামারী, লকডাউন এইসব সবার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ফলে এই সময়ের এটা অনেক বড় একটা বিষয়। আমরা সবাই মিলে সচেতন হলে, পারস্পরিক সাহায্য, সহযোগিতা, ভালবাসার মাধ্যমে এই সমস্যাকে কমিয়ে আনতে পারব।
নিবির রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক,
বায়ো ডেইলি।
তথ্যসূত্রঃ