হাইড্রোজেল যুক্ত মাটির আদ্যপ্রান্ত : পর্ব 2

গতপর্বেই বলেছি পলিমার হাইড্রোজেলগুলো ইলাস্টিক জাতীয় পদার্থ যা আলাদা ভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে এবং হাইড্রোফিলিক 3D নেটওয়ার্কের বহুমুখী পলিমার চেইনের সাথে আয়নিক বন্ধনের সংযুক্ত হয়ে খুব বেশি পরিমাণে তরল পদার্থ গুলিকে সংশ্লেষণ করতে পারে ।
সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, এই হাইড্রোজেলযুক্ত পলিমার মাটি অল্প সময়ের মধ্যে এটির আসল ওজন থেকে প্রায় 100 গুণ বেশি পরিমাণে চাপ দেয় এবং ধীরে ধীরে পানি মাটিতে ছাড়তে থাকে ।
প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এটি তিন ধরনের হয়ে থাকে→
- স্টার্চ কো পলিমার
- পলিভিনাইল অ্যালকোহল
- ক্রস লিংক পলিয়েক্রাইমইডস (Polyacrylamide)
এখন প্রশ্ন করতে পারেন এই ধরনের পলিমার মাটি কিভাবে কাজ করে? কিভাবে গাছে পানি সরবরাহ করে থাকে? সব প্রশ্নের উত্তর এখনি পেয়ে যাবেন……..
হাইড্রোজেলগুলো ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বা নিরপেক্ষ রাসায়নিক চার্জ যুক্ত হয়ে থাকে । এইগুলো লিনিয়ার ও ক্রসলিংক যুক্ত দুই ধরনের হয়ে থাকে । আর এই লিনিয়ার ও ক্রস লিংক চার্জই নির্ধারণ করে দেয় যে পলিমার জেল গুলো কিভাবে মাটির সাথে এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ গুলোর সাথে কিভাবে মিশবে ।
আমরা অনেকেই জানি মাটির উপাদান গুলোতে নেগেটিভ চার্জ থাকে আর ভারী ধাতু গুলোতে পজেটিভ চার্জ থাকে । মাটি আর পানিতে আরো অন্যান্য খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় যেগুলো মিশ্রণের উপর নির্ভর করে পজেটিভ আর নেগেটিভ চার্জ থাকতে পারে । ক্যাটায়নিক পলিমার জেল গুলো সাধারণত মাটির অ্যানায়নিক উপাদান গুলোর সাথে যুক্ত হয় এবং ফ্লককুল্যান্ট বা কনজিলার হিসেবে কাজ করে । অন্যদিকে, অ্যানায়নিক পলিমার জেল গুলো সরাসরি কাদামাটির অ্যানায়নিক উপাদান গুলির সাথে যুক্ত হতে পারে না এবং আলাদা আলাদা ভাগ হয়ে কাজ করে । আয়নিক পলিমার গুলো Ca 2+এর মত আয়নিক সেতুর উপস্থিতিতে কাদামাটি ও অন্যান্য নেগেটিভ চার্জযুক্ত কনার সাথে যুক্ত হতে পারে ।
জেল এবং আশেপাশের দ্রাবক এবং মাটির কণার মধ্যে আকর্ষণ যত বেশি শক্তিশালী হয়, জলের জল শোষণ, সমষ্টি তৈরি এবং মাটির কাঠামো স্থিতিশীল করার ক্ষমতা তত বেশি ।
হাইড্রোজেলকে মাটিতে মেশানোর পর এটি মাটিতে জেলাটিন গঠন করে এবং অনেক লম্বা সময়ের জন্য মাটিতে পানি শোষণ ও বর্জনের কাজ করে । আপনারা এটিকে একটি ক্ষুদ্র জলাশয় ও মনে করে নিতে পারেন । যা অসমোটিক চাপ ব্যবহার করেই ক্ষুদ্র জেল গুলো থেকে পানি আলাদা করে । তাছাড়া পানি ছাড়ার কারণে এটি অন্তর অন্তর মাটি তৈরি করে বাতাস ও পানির সাহায্যে এবং গাছের মূলের বৃদ্ধির জন্য আরও ফাঁকা স্থান তৈরি করে দেয় একবার পলিমার গুলো মাটিতে মিশে গেলে তারা প্রচুর পরিমাণ পানি সংরক্ষণ করে এবং প্রায় 95% পানি জমিয়ে রাখে ।
হাইড্রোজেলকে যুক্ত মাটির কৃষিক্ষেত্রে মিষ্টি পানির ঘাটতির সমাধান দিয়েছে এর পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কাজ করেছে । এটি মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা, পানির ঘনত্ব এবং পানির বাষ্প করণ ক্ষমতায় অনেক প্রভাব ফেলে । জেলগুলি মাটিতে তখনই পানি ও পুষ্টি প্রকাশ করে যখন গাছের মূলের চারপাশে পানি শুকোতে শুরু করে ।
বিজ্ঞানীরা carboxy methylchitosan hydrogel জাতীয় বিভিন্ন উপাদানের দ্বারাই পলিমার গুলোকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করেছেন । শুষ্ক অবস্থায় এটি ব্যবহার করে প্রথমে পাতায় পানির পরিমান এবং পাতায় ক্লোরোফিল বাড়িয়ে শিকড়ের বৃদ্ধি, গাছের বৃদ্ধির ও পুষ্টির ক্ষয় কমে যাওয়া, মাটির অনুপ্রবেশ উন্নত করা ও গাছ প্রতিস্থাপন এর পর পানির চাপে বিরূপ প্রভাব কমানোর মত পরীক্ষায় সফলতার সাথে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন ।
শুষ্ক ও অর্ধেক শুষ্ক অঞ্চলে হাইড্রোজেল প্রয়োগের ফলে মাটির বৈশিষ্ট্য উন্নত হয, পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফসল বা গাছের বৃদ্ধি হয় দ্রুত, অভ্যন্তরেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি থাকে, উন্নত বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং ফলন ও অনেক ভালো পাওয়া যায় ।
নাবিলা রব
জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
Reference
1. https://plantbest.com/hydrogel/