
মানবদেহের অন্ত্রে অবস্থিত অণুজীবগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই জিন স্থানান্তর ঘটতে দেখা যায়। সম্প্রতি ‘সেল’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখানো হয়, অণুজীবগোষ্ঠী বা মাইক্রোবায়োমের মধ্যকার জিন স্থানান্তরের উপর পরিবেশ এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে। (মার্চ ৩১, ২০২১)
ম্যাথিউ গ্রউসিন এবং তাঁর সহকর্মীরা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াসমূহ বা গাট মাইক্রোবায়ম এর ডিএনএ বিশ্লেষণ করছিলেন, অনুভূমিক জিন স্থানান্তর বা হরাইজনটাল জিন ট্রান্সফার চিহ্নিত করার জন্য। হরাইজনটাল জিন ট্রান্সফার হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে অণুজীবগোষ্ঠী তাদের জিন বিনিময় এর মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
গ্রউসিন ও তাঁর সহকর্মীরা লক্ষ্য করেন যে, শহরে বসবাসকারী মানুষের অন্ত্রের মাইক্রোবাইয়োম এর মধ্যে হরাইজনটাল জিন ট্রান্সফার গ্রামের মানুষের তুলনায় বেশী হয়। “আমরা দেখি, গ্রামীণ পরিবেশ থেকে শিল্পোন্নত শহুরে পরিবেশে গাট মাইক্রোবায়ম এর মধ্যে জিন স্থানান্তরের প্রবণতা বেশী”– ম্যাথিউ গ্রউসিন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষক, এমআইটি। এমনকি এসব মাইক্রোবায়ম অ্যন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স জিনও স্থানান্তর করে থাকে বলে তাঁরা দাবি করেন।
গ্রউসিন বলেন, “তানজেনিয়ায় গ্রামের মানুষজন ইতোমধ্যে অ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে এবং তাদের অন্ত্রের অণুজীবগোষ্ঠীর মধ্যে অ্যন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স জিন, বিশেষ করে টেট্রাসাইক্লিন রেসিস্ট্যান্স জিন বিনিময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
মানুষের দেহে টিকে থাকা এবং প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ার জন্য গাট মাইক্রোবায়োম নিজেদের ভেতর জিন বিনিময় করে থাকে। মানুষ কি ধরনের পরিবেশে বাস করে তার উপর নির্ভর করে মাইক্রোবায়োমের গঠন ও বৈচিত্র। তবে শহরে থাকা মানুষের মধ্যে গাট মাইক্রোবায়োম এর বৈচিত্রতা কম থাকে। এর জন্য কিছু ফ্যাক্টর যেমনঃ শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অ্যাান্টিবায়োটিক এর অধিক ব্যবহার প্রভৃতিকে দায়ী করা হয়।
এমআইটি এর অণুজীববিজ্ঞানী এরিক আল্ম ও তার সহকর্মীরা একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির বৈচিত্রতা নিয়ে গবেষণার জন্য বিভিন্ন জাতের মানুষ থেকে প্রায় ৪,০০০ এরও বেশী ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেইন সংগ্রহ করে কালচার করেন এবং ডিএনএ সিকুয়েন্স বা ক্রমবিন্যাস করেন। গ্রউসিন ও তার দল এই ডেটার সাথে আরও একটি ডেটা সংযুক্ত করেন যা দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকানদের নিয়ে করা হয়েছিল এবং যারা নমুনা দিয়েছিলেন তাদের শিল্পোন্নত ও শিল্পোঅনুন্নত ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
শহরের মানুষদের অন্ত্রে উপস্থিত এসকল মাইক্রোবায়ম এর মধ্যে জিন বিনিময় কেন বেশী এবং কোন ফ্যাক্টরগুলো জড়িত তা স্পষ্টভাবে জানা যায় নি। ধারণা করা হচ্ছে, শহরের শিল্প এলাকার মানুষের অন্ত্রের মাইক্রোবায়ম বা অণুজীবগোষ্ঠীর মধ্যে বৈচিত্রতা কম থাকার কারণে বারবার জিন স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। এছাড়াও শহরের মানুষের খাবার ও জীবনধারণ দায়ী হতে পারে বলে অনুমান করছেন গবেষকগণ। আল্ম এর মতে, শহরে মানুষ দৈনিক বিভিন্ন পরিবেশে যেমনঃ রাসায়নিক এক্সপোজার, অত্যাধিক তাপমাত্রা, দূষিত পরিবেশ এ উন্মুক্ত হচ্ছে যা গাট মাইক্রোবায়োম এর মধ্যে জিন স্থানান্তরকে উদ্দীপ্ত করে। তবে শোনেনবার্গ এবং তাঁর সহকর্মীগণ ধারণা করছেন যে, শহরের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত অণুজীবদের মধ্যকার পরিবর্তন ডায়াবেটিস এবং বিভিন্ন মারাত্নক অসংক্রামক রোগ এর কারণ হতে পারে।
মাইক্রোবায়োম সম্পর্কে এসকল ধারণা ভবিষ্যতে গবেষণার পথকে আরও উন্মুক্ত করবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। আল্ম বলেন, “যখন আপনি অণুজীবগুলো বাস্তুসংস্থানে একত্র করেন তখন তাদের জিনোম আর পৃথক থাকে না। প্রকৃতপক্ষে, কোন অণুজীবই স্বাধীন নয়”।
সাদিয়া জামান
হেড অব ডেইলি সায়েন্স প্রজেক্ট, বায়ো ডেইলি
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১১০০
তথ্যসূত্রঃ