করোনা পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস!

প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৪ই নভেম্বর ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয়। ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সাল-এ ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ২৫.৬ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মোট জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিস বহন করছেন। চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ছিলেন। এমনকি করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়েছেন বা কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
ডায়াবেটিসকে বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারের উদ্বেগের বিষয়।যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট অক্টোবর মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “
২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে প্রায় ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই অসংক্রামক রোগে ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬৯ হাজার ৭৫০ হতে পারে। অর্থাৎ মৃত্যু দ্বিগুণের বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। “
কেন ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি??
করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হলেন ডায়াবেটিস রোগী, হার্ট ফেইলিউরের রোগী, কিডনি ফেইলিউরের রোগী, হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগী।
বাংলাদেশে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত। বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীদের একটি বিরাট অংশের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডায়াবেটিসের কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। যেকোনো জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আবার ডায়াবেটিসের রোগীদের একই সঙ্গে কিডনি জটিলতা, হৃদ্রোগ ইত্যাদি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের বড় ধরনের ঝুঁকি আছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (HBA1C) এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি), তার ঝুঁকি তত বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের শর্করা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। রক্তে এইচবিএওয়ানসির মাত্রা ৭ শতাংশের বেশি হওয়া মানে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিসের রোগীদের একটু বেশি সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আফিয়া ইমরাদ তাহাসিন
নিজস্ব প্রতিবেদক,
বায়ো ডেইলি।
তথ্যসূত্রঃ