
কোভিড-১৯ জনসাধারণের জীবনের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে দিয়েছে এবং প্রতিদিন অসংখ্য লোক মারা যাচ্ছে। আলফা, বিটা, গামা বা ডেল্টার মতো এই সংক্রামক রোগের অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্ট (রূপ) দেখা গিয়েছে।
২০২০ সালের আগস্টে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে কোভিড-১৯ এর একটি নতুন রূপ শনাক্ত হয়েছে যেটিকে ল্যামডা ভ্যারিয়েন্ট বা সি. ৩৭ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৯টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে এটির প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, এই ল্যামডা ভ্যারিয়েন্টের ফিনোটাইপিক মিউটেশন আশঙ্কাজনক। যেমন- ভ্যারিয়েন্টটির অতিদ্রুত সংক্রমণ হার বা শরীরে এন্টিবডি তৈরি হতে না দেয়া বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
২০২১ সালের জুনে গ্লোবাল হেলথ এজেন্সি তাদের “সাপ্তাহিক এপিডেমিয়োলজিক্যাল আপডেট” সম্পর্কিত একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিল যাতে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশে ইতোমধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা কমিউনিটি ভিত্তিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
ডব্লিউএইচও (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন)-এর মতে, এই ধরনের মিউটেশন সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ডব্লিউএইচও-এর ভাইরোলজিস্ট জাইরো মেন্ডেজ রিকো জানিয়েছেন যে, এই ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক হওয়ার বিষয়ে কোনও স্পষ্ট প্রমাণ নেই বা কোভিড-১৯ এর অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটির জীবনকাল দীর্ঘ এমন কোন প্রমাণ এখনো মেলেনি। তবে তিনি এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, চিলি এবং বিশেষত পেরু মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন সফল হতে পারে নি। ফলে পেরু এখন নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সাথে লড়াই করছে। বর্তমানে দেশটিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ল্যামডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি দেশ চিলিতেও ইতোমধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে যেমন হয়েছিল ব্রাজিলের গামা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে।
যুক্তরাজ্যে গবেষকরা একে ‘ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া ব্রাজিলের গবেষকরা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ কনসার্ন’ হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন। ব্রাজিলের গবেষকরা বেশ কয়েকটি রিসার্চ পেপারের প্রি-প্রিন্ট স্টাডিতে দেখিয়েছেন যে, এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্যান্য কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রমণক্ষম। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন যে, এই ল্যামডা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কম কার্যকর হতে পারে। সিনোভ্যাক (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন)-এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন।
পল্লব সিংহ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বায়ো ডেইলি
জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(৭৪০৮)
তথ্যসূত্র: The Lambda COVID-19 variant: What do we know about it?