
২০১৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম চীনের উহান শহরে অচেনা কারণে উদ্ভূত নিউমোনিয়ার কথা জানতে পারে। চীনের কর্তৃপক্ষ একে প্রাথমিকভাবে নামকরণ করে “২০১৯-n CoV”
এটি ভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন পূর্বে কখনো মানব দেহে শনাক্ত হয়নি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে নতুন করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড -১৯।
২০২০ সালের ৩০শে জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল করোনাভাইরাস কে আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি উদ্বেগ হিসেবে প্রকাশ করেন। একই সালের মার্চ মাস পর্যন্ত উৎপত্তিস্থল চীন ও বিশ্বের ১১৪ টি দেশে এর সংক্রমণ এবং চার হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস সংক্রমণকে মহামারী হিসেবে উল্লেখ করে।
২ বছরেরও কম সময়ে করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী ৪ কোটির ও বেশি মানুষের মৃত্যু পুরো পৃথিবীবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে এবং সৃষ্টি করেছে অসংখ্য প্রশ্ন। করোনাভাইরাস সারিয়ে তোলার মতো ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি কিন্তু তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন। তবে ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন।
ভ্যাকসিন দিয়েও মানুষের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না যার মূল কারণ মনে করা হচ্ছে ভাইরাস এর রূপ পরিবর্তন। করোনাভাইরাস এর বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ভেরিয়েন্টের ভিন্নতার কারণে করোনার সংক্রমণ ও ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। এই পর্যন্ত ৪ ধরনের৷ ভেরিয়েন্টের কথা জানা গেছে।
- আলফা ভেরিয়েন্ট (B.1.1.7) – সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শনাক্ত হয় যা বর্তমানে পঞ্চাশের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
- বেটা ভেরিয়েন্ট (B.1.351) – প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকাতে এবং বর্তমানে ২০ টি দেশে উপস্থিত।
- গামা ভেরিয়েন্ট (P.1) – ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়ার পর বর্তমানে ১০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
- ডেলটা ভেরিয়েন্ট (B.1.617.2) – ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এটি প্রথম সনাক্তকৃত হয় এবং দ্রুতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
করোনা ভাইরাস এর ভিন্নতার কারণে মানবদেহে এর সংক্রমণের ধরণ এবং প্রতিক্রিয়া ভিন্ন রকম হতে পারে। কিন্তু গবেষকরা বর্তমানে মানব জিনোমের ভিন্নতার কারণে করোনার আক্রমণ, উপসর্গ ও রোগের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছেন।
রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন- বয়স, পূর্ব থেকেই থাকা বিভিন্ন রোগ ঃ ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, আর্থসামাজিক অবস্থান প্রভৃতি কারণ করোনা ঝুঁকির কারণ হিসেবে পূর্ব থেকেই বিবেচিত। কিন্তু মানব জিনোমের ভিন্নতার কারণে করোনার ভিন্নতা একটি কম গবেষণাকৃত বিষয়।
সম্প্রতি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মানব জিনোমের করোনার সংক্রমণ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। হোস্ট জেনেটিক্স ইনিশিয়েটিভ নামক এই গবেষণার রিপোর্টে এমন ১৩টি লোকাসের সন্ধান পাওয়া গেছে যা করোনার সংক্রমনের সংবেদনশীলতা ও প্রখরতার সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে চারটি নির্দেশ করে করোনার প্রতি সংবেদনশীলতা এবং বাকি নয়টি করোনা রোগের প্রখরতা।
গবেষকরা ৪৯,৫৬২ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির জিনোমের সাথে দুই মিলিয়ন সাধারণ ব্যক্তির জিনোমের তুলনা করেছিলেন যারা কোন জ্ঞাত রোগ দ্বারা আক্রান্ত নন। এই গবেষণাটি মানব জিনোম ও করোনার সম্পর্ক উন্মোচনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক কিন্তু এটিই শেষ নয়। গবেষণা দ্বারা সকল জিনের সম্পর্ক উন্মোচন করা প্রয়োজন এবং বিভিন্ন ভেরিয়েন্টের সমন্বিত আক্রমণের ক্ষেত্রে জিনের প্রভাব এখনো গবেষনাধীন।
অন্বেষা সাহানী
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয, খুলনা।
তথ্যসূত্রঃ
1.https://www.nature.com/articles/d41586-021-01773-7
2.https://www.usatoday.com/story/news/health/2021/07/08/covid-19-genetics-play-role-people-escape-effects-study/7892629002/
3.https://www.euro.who.int/en/health-topics/health-emergencies/coronavirus-covid-19/novel-coronavirus-2019-ncov