
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ২৬ বছর বয়সী বৃটিশ তরুণী সাদিয়া খানম যুগান্তকারী এক জীবাণুনাশক তৈরি করেছেন। জীবাণুনাশক মিশ্রণটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ভলটিক’ (Voltique)। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS), নাসা (NASA) ও অন্যান্য অনেক শীর্ষস্থানীয় পরীক্ষাগারে ভলটিকের কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্বের বড় বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সাদিয়াকে ১ কোটি পাউন্ড সমমূল্য পরিমাণে এই মিশ্রণের অর্ডার দিয়েছে।
কোনো পৃষ্ঠের উপর ভলটিক স্প্রে করা হলে তা ওই জায়গাটিকে ১৪ দিন পর্যন্ত জীবাণুমুক্ত রাখতে সক্ষম। মিশ্রণটি মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও অন্যান্য অণুজীবকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মিশ্রণটি করনা ভাইরাসকে ধ্বংস করতে শতভাগ কার্যকর। এর ব্যবহার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের শতকরা ৭০ ভাগ কমিয়ে দিতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নব উদ্ভাবিত এই মিশ্রণটি হাসপাতাল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিমান, নিউক্লিয়ার স্টেশন প্রভৃতি স্থানে ব্যবহারের উপযোগী।
সাদিয়া বলেন, “অল্প বয়স থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আমার তীব্র আকর্ষণ ছিল। আমার এই উৎসাহ প্রথম জাগে ১৪ বছর বয়সে, আমার দাদু আলঝেইমারে আক্রান্ত হওয়ার পর, এবং এর পর থেকেই রোগের প্রতিকারকে আমি আমার লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছি।”
আলঝেইমার গবেষণা ও স্নায়ুক্ষয়ের ওপর তাঁর পিএইচডি অধ্যয়নের প্রাক্কালে কোভিড অতিমারী হানা দেয়।
তিনি আরও বলেন, “আলঝেইমার প্রতিরোধে আমার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, যদিও আমার জন্য বাধা হচ্ছে ফান্ডের অপর্যাপ্ততা। ভলটিকের মতো কিছু তৈরি করার মধ্যে দিয়ে আমি যেমন কোভিড-১৯- এর একটা সমাধান পেতে পারি, আবার একই সাথে আমার আলঝেইমার গবেষণার ফান্ডও পেতে পারি।”
সাদিয়া প্রাথমিক কেস স্টাডি হিসেবে তাঁর মা-বাবার রেস্তোরাঁ ‘ক্যাফে ইন্ডিয়া’-কে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন পরিসেবায় তাঁর উদ্ভাবনের পরীক্ষা করেন।
“আমি বিস্তৃতভাবে কোভিড-১৯-এর ওপর পড়াশোনার পাশাপাশি বাজারের সব প্রচলিত জীবাণুনাশকের ওপর বড় পরিসরে গবেষণা চালিয়েছি। কয়েক মাসের গবেষণার পর, অবশেষে আমি যথাযথ ফর্মুলাটি পেয়েছি আর তার নাম রেখেছি ভলটিক”, সাদিয়া বলেন।
বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কলিন হ্যাগানকে সাথে নিয়ে সাদিয়ার পরিকল্পনা হলো, এই সম্ভাব্য জীবনরক্ষাকারী উদ্ভাবনকে বিশ্ব পরিসরে ছড়িয়ে দেয়া।
তাঁর বাবা গর্বভরে বলেন, “আমার মেয়ের আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বের মানুষকে সাহায্য করতে পারি – এর চাইতে আনন্দের আর কিছু হয় না।”
সাদিয়ার পরিবার যুক্তরাজ্যের চেস্টারে বসবাসরত। সাদিয়ার বাবা একটি রেস্তোরাঁর পরিচালক এবং তাঁর দাদা আজমত আলী ১৯৬৪ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
মেয়ের পড়াশুনা ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে শুরু হোক এমন ইচ্ছায় সাদিয়ার বাবা প্রথমে একটি স্থানীয় মাদ্রাসায় সাদিয়াকে ভর্তি করিয়েছিলেন। ব্ল্যাকবার্ন মাদ্রাসা থেকে জিসিএসই ও আলিম কোর্স সফলতার সাথে সম্পন্ন করে সাদিয়া ভর্তি হন হলি ক্রস সিক্সথ ফর্ম কলেজে। পরবর্তীতে তিনি চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিনতত্ত্বে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
পঙক্তি আদৃতা,
নিজস্ব প্রতিবেদক, বায়ো ডেইলি