অ্যালার্জি সম্পর্কে কতটা জানি?

অ্যালার্জি হলো, শরীরের বাইরের কোনো উপাদান দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করার ফলে সৃষ্টি হওয়া অস্বস্তিদায়ক অনুভূতি। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী এসব উপাদান বেশিরভাগ মানুষের জন্যই অস্বস্তিদায়ক হয় না। তবে কিছু মানুষ এসব উপাদানের প্রতি প্রতিক্রিয়াপ্রবণ। তাই অ্যালার্জিকে এক ধরনের প্রতিক্রিয়াপ্রবণতা বা স্পর্শকাতরতা বলা যেতে পারে। ইংরেজি allergy শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক allos (অপর, ভিন্ন, বিচিত্র) ও ergon (কার্যকলাপ) শব্দের সমন্বয়ে; যার সম্মিলিত পরিভাষা হতে পারে ‘পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া’।
অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ধূলিকণা
- ফুলের রেণু
- কীট পতঙ্গের হুল
- উকুন ও মাইট জাতীয় পোকামাকড়
- বিশেষ কোনো খাবার
- ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া
- পাটের আঁশ
- প্রসাধন সামগ্রী
- সিগারেটের ধোঁয়া
- কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ মানুষ অ্যালার্জিতে ভোগে।
বংশগতভাবে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতাকে অ্যাটোপি (atopy) বলা হয়। এক্ষেত্রে মা-বাবার মধ্যে যেকোনো একজনের অ্যালার্জি থেকে থাকলে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার ৩০% ঝুঁকি থাকে। আর যদি উভয়েরই অ্যালার্জি জটিলতা থাকে সেক্ষেত্রে এই ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান অর্থাৎ অ্যালার্জেন (allergen)-এর সংস্পর্শে এলে অ্যাটোপি প্রবণতাযুক্ত মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া (immune reaction) তৈরি হয়। এসব লক্ষণের মধ্যে রয়েছে –
১। নাকে ও চোখে অ্যালার্জিক রাইনিটিস ও কনজাংক্টিভিটিস,
২। একজিমা (এক ধরনের চর্মরোগ),
৩। অ্যাজমা বা হাঁপানি ইত্যাদি।
ব্যক্তিভেদে লক্ষণগুলোর ভিন্নতা দেখা যায়। এসব ভিন্নতা সূচিত হয় অ্যালার্জেনের ধরন এবং কোন স্থান দিয়ে তা শরীরে অনুপ্রবেশ করছে তার ভিত্তিতে।
অ্যালার্জেন যদি নিঃশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করে তাহলে হিস্টামিন নিঃসৃত হয়। এ কারণে নাকের মিউকোসা (মিউকাস ঝিল্লি) অধিক মিউকাস তৈরি করে এবং প্রদাহের সৃষ্টি হয়। যা থেকে নাকে সর্দি ও চুলকানি হয়, এমনকি ঘন ঘন হাঁচিও হতে পারে। এছাড়া চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয় এবং অনেকের গলা ব্যথা হতে পারে।
অ্যালার্জির ফলে অ্যাজমারও সূত্রপাত ঘটতে পারে। যখন নিঃশ্বাসের সাথে অ্যালার্জেনের প্রবেশ ঘটে তখন ফুসফুস নালীর আবরণ ফুলে গিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়।
বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুগ্ধজাত খাবার ও ডিম অনেকের মধ্যেই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গরুর দুধ পানের ফলে কোনো কোনো শিশুর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়। উল্লেখ্য, অনেকে দুধে থাকা ল্যাকটোজ হজম করতে পারে না ল্যাকটেজ এনজাইমের ঘাটতির কারণে। একে বলা হয় ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এটি অ্যালার্জির অন্তর্ভুক্ত নয়।
অ্যালার্জির ফলে ত্বকে একজিমা ও আর্টিক্যারিয়া (urticaria) সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যালার্জেনের প্রতি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। যার নাম ‘অ্যালার্জেন ইমিউনো থেরাপি’। নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং অ্যালার্জেনের নির্যাসযুক্ত ইনজেকশন, স্প্রে অথবা জিহ্বার নিচে দেয়ার ওষুধ (sublingual tablet) প্রয়োগ এই থেরাপির অন্তর্ভুক্ত।
বেশিরভাগ অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াই লঘু থেকে মধ্যম পর্যায়ের হয়ে থাকে এবং তেমন বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে কিছু মানুষের মধ্যে তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে যার নাম অ্যানাফিল্যাক্সিস (anaphylaxis). এসব ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ গ্রহণ করা জরুরি। অবশ্য অ্যানাফিল্যাক্সিস বিরল ঘটনা। অ্যানাফিল্যাক্সিস সৃষ্টিকারী উপাদানের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, পতঙ্গ ও কিছু ঔষধ। তীব্র অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তির অ্যানাফিল্যাক্সিস মোকাবিলার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা (ASCIA Action Plan for Anaphylaxis; ASCIA-এর পূর্ণরূপ হলো Australasian Society of Clinical Immunology and Allergy) থাকা প্রয়োজন।
সাধারণ ক্ষেত্রে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কারো অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলে এর ধরন ও তীব্রতা নির্ণয় করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
পঙক্তি আদৃতা বোস
জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,
ঢাকা-১১০০।
তথ্যসূত্র: