বায়োফ্লক প্রযুক্তি – মাছ চাষের নতুন দিগন্ত

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের বড় একটি অংশ আসে মাছ থেকে। আমাদের পরিবেশে দিন দিন দূষণ বেড়েই চলেছে যার ফলে প্রকৃতির অনেক প্রাণীকুলের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে যাদের মধ্যে জলজ প্রাণীগুলো অন্যতম। প্রাকৃতিকভাবে মৎস্য চাষ বা অন্য জলজ প্রাণীগুলো কে বাঁচিয়ে রাখা একধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই প্রাণীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদের প্রাকৃতিক ভাবে চাষাবাদের পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কৃত্রিম উপায়ে চাষাবাদের যেসকল পদ্ধতি আছে সেগুলোর দিকে গুরুত্বআরোপ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বায়োফ্লক প্রযুক্তিটি হতে পারে সম্ভাবনাময় একটি পদ্ধতি।
বায়োফ্লক কী?
বায়োফ্লক হলো উপকারি ব্যক্টেরিয়া,অণুজীব ও শৈবালের সমম্বয়ে তৈরী হওয়া পাতলা আস্তরণ, যা জলকে ফিল্টার করে। জল থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদান গুলি শোষণ করে নেয় এবং এর প্রোটিন সমৃদ্ধ উপাদান খাবার হিসেবে মাছ ও অনান্য জলজ প্রাণী গ্রহণ করতে পারে। প্রযুক্তিটি সম্প্রতি জলের গুণমান নিয়ন্ত্রণের একটি টেকসই পদ্ধতি হিসেবে মনযোগ আকর্ষণ করেছে। এটি জলজ চাষের একটি টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়া যা জলজ খামারের কাঠামোর জন্য মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন ফিলের মূল্য সংযোজন সৃষ্টির পাশাপাশি জলের গুণমান ও ক্ষতিকর রোগজীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করে।
বায়োফ্লকের পুষ্টির মানঃ
একটি ভালো পুষ্টির মান বায়োফ্লক থেকেই উদ্ভূত। শুকনো ওজনের প্রোটিন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ, চর্বি ০.৫ থেকে ১৫শতাংশ। এটি ভিটামিন ও খণিজগুলোর প্রধান উৎস(প্রধানত ফসফরাস)। বায়োফ্লক এর প্রধান উপাদান হিটারোট্রফিক ব্যক্টেরিয়া।এই সকল ব্যক্টেরিয়া দ্বারা খাওয়া অ্যমোনিয়া প্রোটিন এ পরিণত হয় যা পরে মাছ গ্রহণ করতে পারে এবং বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে পারে।
বায়োফ্লক পদ্ধতির সুবিধাঃ
- পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা।
- উৎপাদন বেশি হবে।
- জলজ দূষণ ও রোগজীবাণুর ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
- এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ফিডের ব্যবহার ও প্রচলিত ফিডের খরচ হ্রাস করে।
- ফিশারিজ কালচারের ওপর চাপ কমায়।
অসুবিধাঃ
- সময়ব্যপী প্রক্রিয়া।
- ক্ষারের পরিপূরক প্রয়োজন।
- নাইট্রেট জমে থাকায় দূষণের সম্ভাবনা বেশি।
যদিও বাণিজ্যিকভাবে জলজ চাষে বায়োফ্লক সিস্টেমের ব্যবহার খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়নি এবং কৌশলটি এখনো পুরোপুরি মানসম্মত হয়নি তবে বিভিন্ন দেশে এই প্রযুক্তিটি নিয়ে গবেষণা চলছে।
সুস্মিতা চৌহান
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১১০০
তথ্যসুত্রঃ