জেনেটিক প্রদীপের অপেক্ষায় টেই-স্যাকস শিশু

টেই-স্যাকস উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এক ধরনের জেনেটিক ডিসঅর্ডার যার ফলে মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকান্ড (spinal cord) এর স্নায়ু ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এ রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এমনকি বেশীর ভাগ আক্রান্ত শিশুর স্নায়ুর ক্ষতি হতে শুরু করে মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়। পিতা-মাতা উভয়ই যদি এ রোগের বাহক হয়ে থাকে তবে সন্তান টেই-স্যাকস রোগে আক্রান্ত হয়।
দেহকোষের ১৫ নং ক্রোমোজম এ অবস্থিত HEXA জিনের মিউটেশন এর ফলে এ রোগ হয়। HEXA জিন Beta-hexosaminidase এনজাইম তৈরির নির্দেশনা দিয়ে থাকে যা মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে উপস্থিত GM2 ganglioside নামক ফ্যাটি উপাদান ভাঙতে সাহায্য করে। HEXA জিনের মধ্যে মিউটেশন হলে Beta-hexosaminidase এনজাইমের কাজ ব্যাহত হয় এবং এটি GM2 ganglioside ভাঙতে পারে না। এতে করে GM2 ganglioside অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যেতে থাকে এবং বিষক্রিয়ায় রূপ নেয়। একারণে টেই-স্যাকস রোগে আক্রান্ত শিশুদের ৫ বছর বয়সের মধ্যেই মৃত্যু হয়।
সাধারণত জন্ম নেওয়ার পরবর্তী ৩-৬ মাস বয়সের মধ্যেই এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে-
- দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হারানো
- বসা, হামাগুড়ি, চলাফেরায় সমস্যা
- চোখে লাল দাগ (Cherry-red spot)
- উচ্চ মাত্রার শব্দ শুনলে বিপত্তিমূলক আচরণ করা
টেই-স্যাকস রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে শিশুর স্বস্তি ও আরাম এর জন্য সাময়িক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয় যেমন- মেডিকেশন, ফিজিওথেরাপি, ফিডিং টিউব, শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রভৃতি।
তবে জিন থেরাপি, এনজাইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি এ মরণঘাতী রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধে আশার আলো হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
সাদিয়া জামান
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা- ১১০০
তথ্যসূত্রঃ